ব্রেকিং নিউজ

পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা


পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা)

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলছে। প্রধানত নারী ও শিশুরাই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে নারী ও শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা ও পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে। আইনটি ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। এই আইনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ন দিক হলো, পরিবারের কোন নারী কিংবা শিশু নির্যাতনের শিকার হলে সে আদালতের মাধ্যমে সুরক্ষা পেতে পারেন যা তাকে পুনরায় নির্যাতন কিংবা আরও বড় ধরণের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করবে। কেউ যদি সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘন করে তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। মামলার যে কোন পর্যায়ে উভয়পক্ষ আপোস করতে পারবে। এই আইনে পারিবারিক বন্ধন অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করে পারিবারের নারী ও শিশু সদস্যকে সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

পারিবারিক সহিংসতা বলতে বুঝা যায়, পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন কোন ব্যক্তি দ্বারা পরিবারের অপর কোন নারী বা শিশু সদস্যের উপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন ও আর্থিক ক্ষতি করাকে পারিবারিক সহিংসতা বলা হয়।

শারীরিক নির্যাতন বলতে এ আইনে বলা হয়, শারীরিক নির্যাতন হল এমন কোন কাজ বা আচারণ যার দ্বারা পরিবারের কোন নারী বা শিশুর জীবন, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা শরীরের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয় অথবা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিকে দিয়ে অপরাধমূলক কোন কাজ করতে বাধ্য করা বা উস্কানি দেয়া বা বল প্রয়োগ করাও শারীরিক নির্যাতনের অন্তর্ভূক্ত হবে। মানসিক নির্যাতন সম্পর্কে এ আইনে বলা হয়েছে মানসিক নির্যাতন হল; মুখে গালমন্দ করা, তাচ্ছিল্য করা, অবহেলা করা, হয়রানি করা ভয় দেখানো, স্বাভাবিক চলাচলে ও যোগাযোগে যেমন চিঠিপত্র আদান প্রদান, ফোনে কথা বলতে বাধা দেয়া।

সুরক্ষা কি? এবং এ আইনের আওতায় কারা সুরক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন এবিষয়ে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুরক্ষা হলো পারিবারিক নির্যাতনের শিকার অথবা শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে যিনি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তাকে আইনগতভাবে রক্ষার ব্যবস্থা করা যাতে করে তিনি পুনরায় নির্যাতনের শিকার না হন। কারা আবেদন করতে পারবেন এ বিষয়ে বলা হয়েছে-

  • নারী ও শিশু যে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন;
  • নির্যাতনের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে যিনি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন;
  • নির্যাতনকারী ও সম্ভাব্য নির্যাতনকারীর সাথে যার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।

প্রতিকারের জন্য নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি প্রতিকারের জন্য যেসব জায়গায় যেতে পারবেন বা প্রতিকার চাইতে পারবেন:

  • পুলিশ অফিসারের কাছে বা থানায় যেতে পারবেন;
  • প্রয়োগকারী কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন (উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রয়োগকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে যিনি রয়েছেন)
  • সরকারের অনুমোতি নিয়ে যে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে সেখানে যেতে পারেন;
  • সরাসরি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্তের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন।



পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তির জরুরি আশ্রয়ের প্রয়োজন হলে তিনি কিভাবে আশ্রয় পাবেন এ বিষয়ে এ আইনে বলা হয়েছে যে, আশ্রয় নিবাসের দায়িত্বে যিনি থাকবেন তিনি প্রতিকারপ্রার্থীকে আশ্রয় দেবেন-

  • প্রতিকার প্রার্থীর আবেদনের ভিত্তিতে
  • তার পক্ষে কোন পুলিশ কর্মকর্তার সুপারিশের ভিত্তিতে
  • প্রয়োগকারী কর্মকর্তার সুপারিশের ভিত্তিতে
  • সেবাদানকারী সংস্থার সুপারিশের ভিত্তিতে
  • অন্যকোন ব্যক্তির অনুরোধে

আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পাবার নিয়ম কি এ বিষয় এ আইনে বলা হয়েছে, প্রতিকারপ্রার্থী নিজ বা তার পক্ষে প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী সংস্থা বা অন্য কোন ব্যক্তি এই আইনে উল্লিখিত প্রতিকার পাবার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন সরকারের নির্ধারিত ফরমে করতে হবে। প্রতিকারপ্রার্থী যে স্থানে স্থায়ী অথবা অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন অথবা যে স্থানে প্রতিপক্ষ বসবাস করেন অথবা পারিবারিক নির্যাতন যে স্থানে ঘটেছে সেই এলাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে প্রতিকারের জন্য আবেদন করতে হবে। এ আইনের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি আদালতের নিকট থেকে যেসব প্রতিকার পেতে পারবেন সেগুলো হল:

  • অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ;
  • সুরক্ষা আদেশ;
  • বসবাসের আদেশ;
  • ক্ষতিপূরণ আদেশ;
  • নিরাপত্তা হেফাজত আদেশ।

    আবেদনকারীকে রক্ষার জন্য আদালত বসবাস আদেশ প্রতিপক্ষকে কী কী বিষয়ে নিষেধ করতে পারেন অথবা কী ধরণের ব্যবস্থা নিতে পারেন:
    প্রতিকারপ্রার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আবেদনকারী যে অংশীদারী গৃহে বা তার কোন এক অংশে বসবাস করছেন সেখানে প্রতিপক্ষকে বসবাস করার বা যাতায়ত করার ক্ষেত্রে নিষেধ করতে পারেন। আবেদনকারীকে অংশীদারী বাসগৃহ থেকে বেদখল করা বা ভোগদখলে বাধা সৃষ্টিমূলক সকল কাজ করা নিষেধ করতে পারেন। অংশীদারী বাসগৃহে আবেদনকারী কিংবা তার সন্তানের জন্য নিরাপদ না হলে আবেদনকারীর সম্মতি সাপেক্ষে প্রয়োগকারী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নিরাপদ আশ্রয় স্থানের ব্যবস্থা করবেন। প্রয়োজনে অংশীদারী বাসগৃহের পরিবর্তে অপর পক্ষকে এই ধরণের বাসার ভাড়া দেয়ার নির্দেশ দিবেন। আবেদনকারীকে প্রয়োগকারী কর্মকর্তাসহ অংশীদারী বাসগৃহে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার আদেশ দিতে পারেন যাতে করে তিনি তার নিজেস্ব মালিকানাধীন জিনিসপত্র, দলিলাদি অলঙ্কার, নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া আরও অনেক বিষয়ে আদালত আদেশ দিতে পারেন।

    এ আইনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, প্রতিপক্ষকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দেয়ার পরও যদি আদালতে হাজির না হয় অথবা একবার আদালতে হাজির হয়ে পরবর্তীতে আর উপস্থিত না হয় তাহলে প্রতিপক্ষের অনুপস্থিতিতেই একতরফাভাবে বিচার শেষ হবে। কোন প্রতিপক্ষ যদি সুরক্ষা আদেশ বা তার কোন অংশবিশেষ লঙ্ঘন করে তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং সেজন্য তিনি অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার (দশ হাজার) টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। পুনরায় সুরক্ষা আদেশ ভঙ্গ করলে প্রতিবার ভঙ্গের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারদন্ড বা অনধিক ১ (এক লক্ষ) টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে আদালতের নিকট উপযুক্ত বলে মনে হলে অপরাধীকে উত্তমরূপ শাস্তি না দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার তত্ত্বাবধানে কোন সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা প্রদানের জন্য আদেশ দিতে পারেন।

    যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা আবেদন করেন তাহলে তিনি অনধিক ১ বৎসর কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন।

কোন মন্তব্য নেই

রুয়ান্ডার গণহত্যা

মুরাম্বি কারিগরী বিদ্যালয়ে সংঘটিত গণহত্যার শিকারদের খুলি “আর কখনোই নয়“ এই প্রত্যয় নিয়ে প্রতিবছরের ৭ এপ্রিল রুয়ান্ডা তার রাষ্ট্রে ঘটে...