জেনে নেই মন ও শরীর কি এবং কিভাবে একটি অন্যকে প্রভাবিত করে
মন ও শরীরের কার্যক্রম
মন ও শরীর এই দুয়ের সমন্বয়ে মানুষ। মন দেখা যায় না, ধরা-ছোঁয়া যায় না। শরীর দেখা যায়, ধরা যায়, ছোঁয়া যায়। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে শরীর। যে কোন কিছু করতে গেলে শরীরের কোন না কোন অঙ্গ বা প্রতঙ্গের সহায়তা প্রয়োজন হয়। মনের অস্তিস্ত শরীরের ভেতর। মানুষের যত আবেগ বা অনুভূতি যেমন সুখ, দু:খ, আনন্দ, বেদনা, রাগ, হিংসা, ক্ষোভ, ঘৃণা, স্নেহ, মমতা, ভালবাসা, ভয়-ভীতি ইত্যাদির আধার হলো মন। এগুলো প্রকাশের জন্য যেমন শরীরের প্রয়োজন তেমনি মন ছাড়াও শরীর অচল। অর্থাৎ মন ও শরীর একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একে অপরের পরিপূরক। কাজেই সবশেষে বালা যায় শরীরের যে অংশ দেখা যায় না তাহলো মন আর মনের যে অংশ দেখা যায় তাই শরীর।
কীভোবে কাজ করে:
মন ভাবনা চিন্তা করে, স্বাপ্ন দেখে, দৃশ্যকল্প তৈরি করে, পরিকল্পনা করে শরীর সে স্পপ্ন বা ভাবনা বা কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেয়। যেমন: লিওনাদো দা ভিঞ্চি যে মোনালিসা একে বিখ্যাত হয়েছেন সেই মোনালিসাকে তিনি প্রথম দেখেছেন মনে একেঁছেন মনে তারপর শরীরের মাধ্যমে তা এসেছে ক্যানভাসে। এখানে মোনালিসা হচ্ছে শরীর মন উভয়ের কাজের ফসল। মানুষের দ্বারা যা কিছুই করা হোকনা কেন তার উৎপত্তি প্রথমে মনে তারপর শরীরের মাধ্যমে তা বস্তবে। কাজেই মন যা চায় বা চায়না তা বাস্তবায়ন করতে গেলে শরীরের প্রয়োজন আবার শরীর যা করতে চায় বা চায় না মন ছাড়া তা হয় না। অর্থাৎ মন ছাড়া শরীর চলে না আবার শরীর ছাড়া মনের কোন চাওয়াই পূর্ণ হয় না। অতএব দেখা যাচ্ছে মন ও শরীর ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। এক অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
শারীরিক ও মানষিক স্বাস্থ্য:
স্বাস্থ্য বলতে সাধারণত অধিকাংশ মানুষের ধারণা শরীর কেন্দ্রিক। শরীরের যে কোন অসুবিধা বা অসুস্থতাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। সেকারনে স্বাস্থ্য বলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শারীরিক স্বস্থ্যকেই বুঝানো হয়। শারীরিক সুস্থতাকে সুস্বাস্থ্য এবং শারীরিক অসুবিধা বা সমস্যাকে অসুস্থতা বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বস্থ্য হলো এমন অবস্থা যেখানে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক এই তিনটির সুস্থ সমন্বয়কে বোঝায়।
মানসিক স্বাস্থ্য:
মানসিক
স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির ভাবনা, অনুভূতি এবং জীবনের বিভিন্ন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে
চলা। এটা মানুষের চাপ মোকাবেলা করতে, অন্যের তুলনা করতে এবং নিজের পছন্দ বেছে নিতে
সাহায্য করে। মানসিক স্বাস্থ্য ব্যক্তির ভাল থাকার একটি অবস্থা যার মাধ্যমে সে
নিজের সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপ মোকাবেলা করতে পারে,
ফলপ্রসূভাবে কাজ করতে পারে এবং তার নিজের সমাজে অবদান রাখতে পারে। আমরা নিচের
বৈশিষ্টগুলো থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা করতে পারি-
মানসিক স্বাস্থ্যের দিক নির্দেশনাসমূহ:
- জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারে;
- বিভিন্ন ধরণের পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে;
- নিজের ক্ষমতাগুলোকে সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করতে পার;
- নিজের অক্ষমতাগুলোকে সহজে মেনে নিতে পারে;
- রাগ, ভয়, হিংসা, অপরাধবোধ প্রভৃতি অনুভূতির কাছে পরাজিত হয় না;
- আত্ম-সম্মানবেধ সম্পন্ন থাকে;
- নিজের কাজ সঠিকভাবে করতে পারে এবং অন্যের দায়িত্বকে মেনে নিতে পারে;
- অন্যের সাথে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকর রাখতে পারে;
মানসিক সমস্যা:
- মানসিক সমস্যা হচ্ছে এমন কতগুলো সমস্যা যা ব্যক্তির মাঝে উপস্থিত হয়ে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, এলোমেলো করে দেয়;
- মানসিক সমস্যার করণে ব্যক্তির নানা ধরণের ভোগান্তি হয় কিন্তু তা বাইরে থেকে প্রকটভাবে বোঝা যায়না;
মানসিক রোগ:
- মানসিক রোগ হচ্ছে সেই সমস্যা যা ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটায়;
- মানসিক রোগ হলে ব্যক্তি একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। কখনো কখনো ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় থাকে;
- মানসিক রোগ হলে তা বাইরে থেকে দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায়;
- মানসিক রোগ মানুষের সুষ্ঠু বিবেচনাবোধকে বাধাগ্রস্থ করে;
- মানসিক সমস্যা হলে ব্যক্তির স্বাভাবিক আচারণকে অস্বাভাবিক করে তোলে;
কোন মন্তব্য নেই