ব্রেকিং নিউজ

জেনে নিন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। পুনর্গঠিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যাত্রা শুরু করেছে ২০১০ সালের ২৩ জুন। সমাজে মানবাধিকার সংস্কৃতি গড়ে তোলাকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের প্রধান দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে। কমিশন এই ধারণা পোষণ করে যে, মানবসত্তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য মানবাধিকারের পূর্ণ বাস্তবায়ন অপরিহার্য এবং তার জন্য প্রয়োজন সমাজের সর্বস্তরে মানবাধিকার সংস্কৃতির চর্চা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মনে করে, একজন নাগরিকের প্রতি অপর নাগরিকের শ্রদ্ধাবোধ সমাজে মানবাধিকার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার চাবিকাঠি। পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষার মূল দায়িত্ব যেহেতু রাষ্ট্রের, তাই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ভুক্তভোগী নাগরিক এবং রাষ্ট্রের মাঝে সেতুবন্ধের কাজ করতে চায়।
মানবাধিকার হল মানুষের জন্মগত অধিকার। মানুষের মর্যাদার সাথে এর রয়েছে গভীর সম্পর্ক। এই অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, মানুষ হিসেবে এ অধিকার তার প্রাপ্য। পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার জন্য মানুষের এই অধিকার দরকার। এক কথায় মানবাধিকার হলো “সব ধরণের ভয় ও অভাব থেকে মুক্তি”। মানবাধিকারের কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে যেগুলো হল:

v  মানবাধিকার হল সার্জজনীন
v  এই অধিকারগুলো কেউ কখনো কারো কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না
v  কোন মানুষ এই অধিকার নিজেও কখনো ত্যাগ করতে পারবে না
v  মানবাধিকার বিভিন্ন ধরণের এবং একটি অ্ন্যটির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত
v  মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত অধিকারগুলো একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দায়দায়িত্ব সমূহ:

অধিকার ও দায়িত্ব একে অন্যের পরিপূরক। অধিকার পূরণের ক্ষেত্রে অধিকার প্রদানকারী এবং অধিকার ভোগকারী উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। উভয়পক্ষ তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন না করলে অধিকার বাস্তব রূপ পায়না। মানবাধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব রাষ্ট্র বা সরকারের। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের তিন ধরণের দায়িত্ব রয়েছে।
এক.   মানবাধিকারকে সম্মান করা;
দুই.   মানবাধিকার রক্ষা করা্;
তিন.  মানবাধিকার পূরণ করা;

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন হচ্ছে এক ধরণের মধ্যস্থতার ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান। জনগণ যেন তাদের দাবি নিয়ে রাষ্ট্রের কাছে পৌছাতে পারে তার জন্য সেতু হিসেবে কাজ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আবরা রাষ্ট্র বা সরকারও যেন সহজে জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়। মানবাধিকর প্রতিষ্ঠায় তার দায়িত্বের অংশ হিসেবে রাষ্ট্র নিজেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান তৈরি করে।


জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ক্ষমতা:

বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ক্ষমতা বা এখতিয়ার ব্যপক। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন-২০০৯ এর মাধ্যমে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী মানবাধিকার কমিশন যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ গ্রহণ করতে পারে। কমিশনে কেউ অভিযোগ না করলেও কমিশন নিজ উদ্যোগে অভিযোগ নিতে পারবে। কমিশন যে কোন ব্যক্তিকে তলব করতে পারে এবং তার কাছ থেকে কাগজপত্র চাইতে পারে। এরপর কমিশন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত এবং মধ্যস্থতা করতে পারে। প্রয়োজনে কাউকে জরিমানাও করতে পারে। তাছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে সুপারিশ করতে পারে। আইনের বিধান মতে সরকারকে অবশ্যই সেই সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়ে। উল্লেখ্য যে, আইন পর্যালোচনা করে তা পরিবর্তনের সুপারিশ করতে পারে মানবাধিকার কমিশন।

মানবাধিকার কমিশনের কর্যক্রম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু ধারণা:

v  অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন আলাদা করে বুঝতে হবে;
v  জীবন, অধিকার সমতা ও মর্যাদাহানি হলে মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করা যাবে;
v  যে কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করতে পারবে;
v  হাতে লিখে, ডাকে, কুরিয়ারে, ফ্যাক্সে, ই-মেইলে কমিশনে অভিযোগ পাঠানো যাবে;
v  ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলে www.nhrc.org.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে অভিযোগ দায়ের (file complaint) অংশে ক্লিক করে সেখানেই সরাসরি ফরম পূরণ করে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে;
v  (+৪৪ ০২)৮৩৩১৪৯২ নম্বরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফোন করে আপনার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পারবেন;
v  মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী তিনি যেই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা যাবে;
v  জনসেবকের দায়িত্বে অবহেলার করণে মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করা যাবে;
v  সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করা যাবে;
v  মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করার ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর কোন টাকা পয়সা খরচ হবে না;
v  অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মানবাধিকার কমিশন তা যাচাই বাছাইয়ের কাজ শেষ করবে;
v  আদালতের বিচারাধীন কোন মামলার বিষয় কমিশন অভিযোগ হিসেবে নিতে পারে না অথবা সরকারি কর্মচারীদের চাকরি সংক্রান্ত এমন কোন বিষয় যা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য সে বিষয়ে কোন অভিযোগ নিতে পারে না। তবে এসব ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশন ইচ্ছা করলে কোন ভুক্তভোগীকে আইনগত সহায়তা দিতে পারবে এবং তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবে। এক্ষেত্রে আইনজীবীর খরচ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বহন করবে;
v  তদন্তের ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতের মতো ক্ষমতা রয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের;
v  মানবাধিকার কমিশন কাউকে হাজির করতে দেওয়ানি আদালতের মতো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে;
v  মানবাধিকার কমিশন শাস্তি দিতে পারেনা তবে জরিমানা করতে পারে;
v  মানবাধিকার কমিশন অভিযোগের বিষয় গোপন রাখে;
v  অভিযোগকারীর নিরাপত্তা দিতে উদ্যোগ নেয় মানবাধিকার কমিশন;

মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ অনুযায়ী অভিযোগ পরিচালনার ধাপগুলো:

১. কমিশন অভিযোগ গ্রহণ করে;
২. অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন তদন্ত করবে;
৩. তদন্তের মধ্য দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন ঘটনা যদি কমিশনের মনে হয় মধ্যস্থতার মধ্য দিয়ে সমাধান সম্ভব, তবে কমিশন মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেবে;
৪. যদি মধ্যস্থতার মধ্য দিয়ে অভিযোগের সমাধান সম্ভব না হয় তবে সেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মমলা দায়ের করার জন্য অথবা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কমিশন যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করবে;
৫. সুপারিশের একটি কপি কমিশন অভিযোগকারীর কাছেও পাঠাবে;
৬. কমিশন তাদের পাঠানো সুপারিশের বিষয় কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা কর্তৃপক্ষের কাছে তা জানতে চাইবে বা সুপারিশের প্রেক্ষিতে যেসব পদক্ষেপ নেয় হয়েছে তার ফলোআপ প্রতিবেদনও চাইবে;
৭. কমিশনের চাওয়ার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ হয় এবং কমিশন যদি প্রয়োজন মনে করে তবে বিষয়টির বিস্তারিত বিবরণ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে এবং রাষ্ট্রপতি সংসদে বিষয়টি ‍উপস্থাপনের পদক্ষেপ নেবেন;
৮. যদি মধ্যস্থতা সফল হয় তবে এর সমাধানের জন্য কমিশন অন্যান্য দিকনির্দেশনার সাথে সাথে যৌক্তিক পর্যায়ের জরিমানার নির্দেশনা দেবে।

মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি:


সূত্র:
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের
মানবাধিকারকর্মীর ব্যবহারিক পুস্তিকা


কোন মন্তব্য নেই

রুয়ান্ডার গণহত্যা

মুরাম্বি কারিগরী বিদ্যালয়ে সংঘটিত গণহত্যার শিকারদের খুলি “আর কখনোই নয়“ এই প্রত্যয় নিয়ে প্রতিবছরের ৭ এপ্রিল রুয়ান্ডা তার রাষ্ট্রে ঘটে...