এডুকেশন ওয়াচ ২০১৪ এর আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কোন পথে?
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কোন পথে
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কীভাবে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে তা বোঝার জন্য সমাপনী পরীক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
- প্রতিবছর পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধন শুরু হয় মার্চ-এপ্রিল মাসে আর তা শেষ হয় আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে। পরীক্ষার্থীপ্রতি নিবন্ধন ফি ৬০ টাকা। কিন্তু সব পরীক্ষার্থী সমপরিমান টাকা দেয়না। ৬৪% পরীক্ষার্থী নিবন্ধনের জন্য ৬০ টাকাই দিয়েছিল। কিন্তু ৩৪.৩ শতাংশ পরীক্ষার্থীকে এর চেয়ে বিশি টাকা দিতে হয়েছিল, যা সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা। অবশ্য খুব অল্পসংখ্যক পরীক্ষার্থীকেই এত বেশি টাকা দিতে হয়েছিল। তুলনামূলকভাবে কিন্ডারগার্ডেনগুলো পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিবন্ধনের জন্য বেশি ফি নিয়েছিল।
- প্রতি ইউনিয়নে একটি করে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় এর জন্য বেছে নেওয়া হয়। পরীক্ষার হল পরিদর্শকদের মূলত নেওয়া হয়েছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এবং কোন পরিদর্শককেই তার নিজ ইউনিয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাদের জন্য উপজেলা পর্যায়ে অবহিতকরণ সভার আয়োজন করা হয়েছিল প্রতি বিষয়ের জন্য তিন স্তরের পরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এরা হলেন প্রধান পরীক্ষক, সহকারী প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষক। পরীক্ষক সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছিল পরীক্ষার্থী সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে-প্রতি ২০০টি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার জন্য একজন পরীক্ষক। পরীক্ষকদের জন্য সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল। পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজের চাপ ও নিম্ন পরিতোষিকের ব্যাপারে কয়েকজন পরিদর্শক ও পরীক্ষক তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিল।
- দূর্বল পরীক্ষার্থীদের সবলদের মাঝখানে রেখে তালিকা তৈরি করে উপজেলা অফিসে পাঠানো হয়েছিল এমনটি উপজেলা অফিস থেকে এর কোন পরিবর্তন করা হয়নি। এর ফলে পরীক্ষার সময় সবলদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে দুর্বল পরীক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
- পরীক্ষার সময় বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী অপরের সহায্য ছাড়াই নিজ নিজ পরীক্ষা দিয়েছে। তবে যাদের সাহায্য দরকার ছিল তাদের জন্য সাহায্যের দ্বারও উন্মুক্ত ছিল।
- প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি থেকে যেরকম প্রশিক্ষণ ও নির্দেশণা দেওয়া হয়েছিল তা অনুসরন করে পরীক্ষকরা বেশ উদারভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করেছেন। পাশের হার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অনেক পরীক্ষার্থীর নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সময় সল্পতার কারনে উত্তরপত্র মূল্যায়ণ পরীক্ষকদের কাছে বাড়তি চাপ মনে হয়েছিল।
পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বিদ্যালয়ের উদ্যোগ:
শিখনের বিকাশ ঘটানোই শিক্ষাব্যবস্থার মূল কাজ। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জন্য বিদ্যালয়গুলো পরীক্ষার্থীদের কীভাবে প্রস্তুত করে এ বিষয় একটু খেয়াল নিলে দেখা যাবে সমপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয় পরীক্ষার্থী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীরা যখন চতুর্থ শ্রেনিতে পড়ে তখন থেকেই বিদ্যালগুলো এ ব্যাপারে ভাবতে শুরু করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেনির বার্ষিক ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই পঞ্চম শ্রেনিতে উত্তীর্ণ করা হয় ও সমাপনী পরীক্ষার্থী হিসেবে গণ্য করা হয়। যারা বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফল করে না, বিদ্যালয়গুলো তাদের জন্য মা-বাবার কাছ থেকে বিদ্যালয় আয়োজিত কোচিং-এ পাঠানো ও প্রাইভেট টিউটর রাখার প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেয়। কিন্তু ব্যতিক্রম বাদে, এভাবে প্রায় সব শিক্ষার্থীই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার দিকে অগ্রসর হয়।
কোচিং ক্লাসের বাধ্যবাধকতা অনুসারে বিভিন্ন ধরণের বিদ্যালয়ের শতকার বিন্যাস:
কোচিং এর বাধ্যবাধকতা
|
বিদ্যালয়ের ধরণ
|
||||
সরকারি
|
নতুন সরকারি
|
কিন্ডার গার্ডেন
|
উপানুষ্ঠানিক
|
এবতেদায়ি মাদ্রাসা
|
|
বাধ্যতামূলক
|
৭৮.০
|
৭৬.০
|
৬১.৩
|
৭১.২
|
৬২.৭
|
বাধ্যতামূলক নয়
|
৭.৩
|
১২.০
|
২৫.৫
|
১৫.২
|
১২.০
|
অনুষ্ঠিত হয়নি
|
১৪.৭
|
১২.০
|
১৩.১
|
১৩.৬
|
২৫.৩
|
মোট
|
১০০.০
|
১০০.০
|
১০০.০
|
১০০.০
|
১০০.০
|
সূত্র: এডুকেশন ওয়াচ প্রধান শিক্ষকের সাক্ষাৎকার, ২০১৪
কোচিং শুরু হওয়ার মাস অনুসারে বিদ্যালয়ের শতকরা বিন্যাস:
বেশিরভাগ বিদ্যালয়েই বছরের শুরু থেকে কোচিং চালু হয়েছিল। এটি আয়োজন করা হতো বিদ্যালয়ের কর্মঘন্টার আগে, পরে বা মাঝখানে; কোন কোন বিদ্যালয় এর যেকোন দুটির সমন্বয়ে। সারা বছর বিদ্যালয়গুলো গড়ে ৪১২ ঘন্টার কোচিং প্রদান করেছিল; গ্রামের বিদ্যালগুলোতে ৪১৬ ঘন্টা ও শহরের বিদ্যালয়গুলোতে ৩৮২ ঘন্টা বিদ্যালয়ের ধরণ অনুসারে, নতুন সরকারি বিদ্যালয়ে এটি ৪৪০ ঘন্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪২৩ ঘন্টা, কিন্ডারগার্ডেনে ৪১৬ ঘন্টা, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৬৬ ঘন্টা ও এবতেদায়ি মাদ্রাসায় ২২১ ঘন্টা।
সূত্র: এডুকেশন ওয়াচ প্রধান শিক্ষকের সাক্ষাৎকার, ২০১৪
কোচিং ফি নিচ্ছে এমন বিদ্যালয়ের শতকরা হার:
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরুর পর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আরেকটি নতুন সংযোজন হলো মডের টেষ্ট। বিদ্যালয়গুলোর নিজেস্ব উদ্যোগ, কতকগুলো বিদ্যালয় একত্রিত হয়ে সমন্বিতভাবে এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসের উদ্যোগে এই টেস্ট আয়োজিত হয়। মডেল টেস্ট এর উদ্দেশ্য হলো মূল পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মূল পরীক্ষায় সম্ভাব্য কী ধরণের প্রশ্ন আসতে পারে তার একটি ধারণা প্রদান করা।
সূত্র: এডুকেশন ওয়াচ প্রধান শিক্ষকের সাক্ষাৎকার, ২০১৪
সূত্র:
এডুকেশন ওয়াচ ২০১৪
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কোন পথে?
একটি নিরীক্ষা
জুন ২০১৫
প্রকাশনা ও সমন্বয়ে:
গণসাক্ষরতা অভিযান
কোচিং ফি নিচ্ছে এমন বিদ্যালয়ের শতকরা হার:
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরুর পর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আরেকটি নতুন সংযোজন হলো মডের টেষ্ট। বিদ্যালয়গুলোর নিজেস্ব উদ্যোগ, কতকগুলো বিদ্যালয় একত্রিত হয়ে সমন্বিতভাবে এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসের উদ্যোগে এই টেস্ট আয়োজিত হয়। মডেল টেস্ট এর উদ্দেশ্য হলো মূল পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মূল পরীক্ষায় সম্ভাব্য কী ধরণের প্রশ্ন আসতে পারে তার একটি ধারণা প্রদান করা।
কোচিং ফি নিচ্ছে এমন বিদ্যালয়ের শতকরা হার |
সূত্র:
এডুকেশন ওয়াচ ২০১৪
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কোন পথে?
একটি নিরীক্ষা
জুন ২০১৫
প্রকাশনা ও সমন্বয়ে:
গণসাক্ষরতা অভিযান
কোন মন্তব্য নেই