জেনে নেই শিশু অধিকার সম্পর্কে কিছু বিষয়
শিশু অধিকার
চাহিদা
চাহিদার
সাথে দায়বদ্ধতা জড়িত থাকে না। চাহিদার মধ্যে স্তরবিন্যাস থাকতে পারে, কিছু চাহিদা আছে যা অন্যান্য চাহিদার
থেকে গুরুত্বপূর্ণ। চাহিদাগুলো একে অন্যের সাথে পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়।
অধিকার
অধিকারের
সাথে দায়বদ্ধতা জড়িত থাকে। সকল অধিকার সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোন অধিকার বেশী
গুরুত্বপূর্ণ কোনটি কম, অধিকারের প্রশ্নে এমন কোন স্তরবিন্যাস থাকে না। যদি কোন একটি
অধিকার লঙ্ঘন করা হয় তবে অন্যান্য অধিকারগুলোর ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়বে।
চাহিদা
|
অধিকার
|
চাহিদাগুলো
ক্রমানুসারে বিন্যাস করা যেতে পারে
|
অধিকার
ভিত্তিক পন্থা অনুসারে সকল মৌলিক চাহিদাই হলো অধিকার এবং এগুলো পুরণ করা বাধ্যতামূলক
কারণ অধিকার বোঝাপাড়ার কোন বিষয় নয়।
|
চাহিদা
পূরণ না হওয়ার ক্ষেত্রে কারো কোন প্রকার আইনি প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ থাকেনা।
|
অধিকার
প্রশ্নে আইনী বাধ্যবাধকতা বা কর্মপন্থা থাকে। যদি কারো অধিকার লঙ্ঘন হয় হবে সেক্ষেত্রে
নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সে এর প্রতিকার চাইতে পারে।
|
|
অধিকার
বিষয়টি সার্বজনীন এবং পৃথিবীর সকল শিশুর ক্ষেত্রে তা সমভাবে প্রযোজ্য।
|
চাহিদার
সাথে দায়বদ্ধতা জড়িত নয়।
|
অধিকারের
সাথে দায়বদ্ধতা জড়িত।
|
জাতিসংঘ শিশু অধিকার
সনদ:
জাতিসংঘ
শিশু অধিকার সনদ হলো শিশু অধিকার বিষয়ক একটি ব্যপকভিত্তিক আইন। ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী
রাষ্ট্রকর্তৃক অনুস্বাক্ষরকৃত একটি আন্তর্জাতিক দলিল। ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ
কর্তৃক গৃহীত হবার পর থেকে এ যাবৎ ১৯২ টি রাষ্ট্র সনদটিতে অনুস্বাক্ষর করছে। এই সনদটি
শিশুর জীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়ের ক্ষেত্রে অধিকারের মান নির্ধারিত করছে যেখানে শিশুর
স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা, সামাজিক থেকে নাগরিক অধিকারগুলো অর্ন্তভূক্ত।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার
সনদের ইতিহাস:
১৯২৩
সালে সর্বপ্রথম শিশুদের অধিকার বিষয়ক চার্টারের খসড়া প্রস্তুত করেন। তখনকার সময় থেকে
আন্তর্জাতিকভাবে Save the Children জোট শিশু অধিকারের প্রচার এবং ব্যপ্তি নিয়ে এক
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
১৯২৪
সালে জাতিপুঞ্জ কর্তৃক শিশু অধিকার ঘোষনা গৃহীত হয়। শিশুদের দুর্দশা বিশেষত যুদ্ধের
কারনে ভয়াবহতার স্বীকার শিশুদের দুর্দশা লাঘবে এটিই ছিলো প্রথম আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা
যেটিকে শিশুদের অধিকার বিষয়ক প্রথম ঘোষনা হিসেবে বিবেচিত।
১৯৮৮
সালে সাধারণ পরিষদ কর্তৃক সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনাপত্র গৃহীত হয়। যদিও এই ঘোষনা
পত্রে শিশুর অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভক্ত হয়েছে তারপরেও যুক্তি দেয়া হয়েছে যে, আলাদা
কোন আইন বা দলিলের মাধ্যমে শিশুদের বিশেষ প্রয়োজনগুলো তুলে ধরা উচিত (প্রাপ্ত বয়স্কদের
সাথে তুলনা সাপেক্ষে)।
১৯৫৯
সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক দ্বিতীয়বার শিশু অধিকারবিষয়ক ঘোষনা গৃহীত হয়।
সাধারণ পরিষদ ১৯৭৯ সালকে শিশুদের জন্য আন্তর্জাতিক বর্ষ হিসেবে ঘোষনা করে। সেই বছর
শিশু বিষয়ক ঘোষনাপত্রের ১০টি পয়েন্ট প্রকাশ করা হয়।
১৯৮৯
সালে শিশু অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রের খসড়া চুড়ান্ত করা হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক
সনদটি গৃহীত হয় এবং স্বাক্ষরের জন্য ২০ নভেম্বর ১৯৮৯ তারিখ থেকে উন্মুক্ত করে দেয়া
হয়।
১৯৯০
সালে বাংলাদেশসহ ২২ টি সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক সনদটি অনুস্বাক্ষরিত হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যার
সদস্যরাষ্ট্রের অনুস্বাক্ষরের পর ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৯০ তারিক হতে সনদটি কার্যকর হয়।
বর্তমানে সোমালিয়া, সুদান এবং যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত ১৯৩ টি রাষ্ট্র এই সনদটি অংশীদার।
৪টি
মূলনীতির উপর জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদটি প্রতিষ্ঠিত:
শিশুর সর্ব্বোত্তম স্বার্থ:
সরকারি
বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আদালত, প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তি যেই হোক না কেন
শিশুদের ব্যাপারে যে কোন প্রকার পদক্ষেপ বা কর্মসূচী গ্রহণের ক্ষেত্রে শিশুর স্বার্থই
হবে প্রথম ও প্রধান বিবেচনার বিষয়।
বৈষম্যহীনতা:
জাতিসংঘ
শিশু অধিকার সনদের ধারা-২ এ, শিশুদের সমান সুযোগ প্রদানে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি
উল্লেখ করা হয়েছে। সকল শিশুর বৈষম্যহীনভাবে সমান অধিকার ভোগ করবে।
বেঁচে থাকা এবং উন্নয়ন:
জাতিসংঘ
শিশু অধিকার সনদের ধারা-৬ এ শিশুর বেঁচে থাকা এবং উন্নয়নের জন্য সম্পদ, দক্ষতা এবং
সহযোগীতা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। খাদ্য, বাসস্থান, নিরাপদ
পানি, শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, বিশ্রাম এবং বিনোদন, সংস্কৃতিক কর্মকান্ড, তথ্য
পাওয়ার অধিকার ইত্যাদি অর্ন্তভূক্ত। এই অধিকারগুলো শুধু থাকলে হবে না দেখতে হবে শিশুদের
এসব প্রবেশাধিকার আছে কিনা। শরনার্থী শিশু, পঙ্গু শিশু, সংখ্যালঘু অথবা আদিবাসী শিশুদের
অধিকার বিষয়ে সনদে আলাদা ধরা আছে।
অংশগ্রহণ:
নিজেদের
স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিশুদের নিজেস্ব মতামত ও ধারণা প্রকাশের অধিকার রয়েছে (ধারা-১২)।
শিশুর বয়স ও পরিণতি বুদ্ধির কথা বিবেচনা করে শিশু যাতে তার মতামত প্রদান করতে পারে
এবং তার মতামতকে যাতে গুরুত্ব প্রদান করা হয় অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসূহ তার নিশ্চয়তা
বিধান করবে।
ক্লাস্টারঃ
বেচে থাকা
জাতিসংঘ
শিশু অধিকার সনদের জীবন রক্ষা ক্লাস্টারের অধীনে নিন্মোক্ত ধারাগুলো অন্তভূক্ত
ধারা
-৬ : জীবন ধারণ, জীবন রক্ষা এবং বেড়ে ওঠা
ধারা
– ৭ : নাম ও জাতীয়তা
ধারা
– ৯ : পিতামাতার সঙ্গে বসবাস করার অধিকার
ধারা
-১৯ : শিশুকে অত্যাচার ও অবহেলা থেকে রক্ষা করা
ধারা
-২০ : পিতামাতার অবর্তমানে বিকল্প যত্নের ব্যবস্থা
ধারা
– ২১ : দত্তক/ পোষ্য/ পালক গ্রহণ
ধারা
- ২৩ : প্রতিবন্ধী শিশু
ধারা
– ২৪ : স্বাস্থ্য পরিচর্যা
ধারা
– ২৬ : সামাজিক নিরাপত্তা
ধারা
– ২৭ : জীবন যাপনের মান
ধারা
– ৩০ : আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিশু
ধারা
– ৩২ : শিশু শ্রম
ধারা
– ৩৩ : মাদক দ্রব্য ব্যবহার
ধারা
– ৩৪ : শিশুর যৌন শোষণ এবং যৌন নিপিড়ন
ধারা
– ৩৮ : যুদ্ধ বা সশস্ত্র সংঘাত
ধারা
– ৩৫ : শিশু অপহরণ, বিক্রয় ও পাচার
ক্লাস্টারঃ বেচে থাকা
/ উন্নয়ন
জাতিসংঘ
শিশু অধিকার সনদের বেড়ে উঠা ক্লাস্টারের অধীনে নিন্মেক্ত ধারাগুলো অন্তভূক্ত
ধারা
– ৩ : শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ
ধারা
– ৫ : পিতা মাতার নির্দেশ ও শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ যোগ্যতা
ধারা
– ৬ : জীবন ধারণ, জীবন রক্ষা এবং বেড়ে ওঠা
ধারা
– ৭ : নাম ও জাতীয়তা
ধারা
– ৮ : পরিচিতি সংরক্ষণ
ধারা
– ৯ : পিতামাতার সঙ্গে বসবাস
ধারা
– ১০ : পরিবারিক পুনর্মিলন
কোন মন্তব্য নেই