উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যা ও প্রতিরোধে করণীয়
নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ
১৭ মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৯.৪ মিলিয়ন
মানুষ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে মারা যায়। যা মূলত ঘটে থাকে উচ্চরক্তচাপের কারণে। সারা
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে, যদিও রোগ দুটিকে এক সঙ্গে
ধরা হয়। ইউরোপের তুলনায় আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে বেশিরভাগ মানুষ সংক্রমক ব্যধিতে
আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে ও স্ট্রোকের মতো তথাকথিত সভ্যতার রোগে
ব্যধিগুলো এখন আর পিছিয়ে নেই। আফ্রিকা ও এশিয়ায় বিস্তৃত হচ্চে এসব। ডাব্লিউএইচও-র তথ্য
অনুযায়ী ৪৬ শতাংশ আফ্রিকান ৬০ বছর বয়স হওয়ার আগেই হৃদযন্ত্রের অসুখ বিসুখে মারা যায়।
শিল্পোন্নত অনেক দেশে অকাল মৃত্যুর জন্য মূলত হার্ট ও মস্তিষ্কের রোগ ব্যাধি দায়ী।
ডাব্লিউএইচও-র অসংক্রামক ব্যাধি বিভাগের ডা. শান্তি মেন্ডিস এ প্রসঙ্গে বলেন, উন্নয়নশীল
দেশগুলোতে এখন এই ধরণের রোগব্যাধির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। উচ্চরক্তচাপের মতো উপসর্গ গুলো
এর মূল কারণ।
ডাব্লিউএইচও-র
প্রধান মার্গারেট চ্যান সতর্ক করে বলেন, সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ বহু বছর ধরে থাকলেও কোন
লক্ষণ প্রকাশ পায়না এর মাত্রা অত্যন্ত উচুঁ হলেও ভুক্তভোগীরা তা বুঝতে পারে না। বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা এর কারণ হিসাবে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাই দায়ী বলে মনে করে। খাবারে
অতিরিক্ত লবন, মদ্যপান, ধূমপান, আলস্য ইত্যাদি উচ্চরক্তচাপের পথকে প্রশস্ত করে। ড.
মেন্ডিস এই প্রবনতাটা ইদানিং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও লক্ষ্য করছেন। নগরায়নের সাথে সাথে
মানুষের জীবনযাত্রারও পরিবর্তন হচ্ছে সেসব দেশে। আগে সেখানকার মানুষের খাদ্যাভ্যাস
অন্যরকম ছিল। কায়িক পরিশ্রমেও অভ্যস্থ ছিলেন তারা। আজকাল স্যুপ ও বিভিন্ন খাবারে বেশি
লবন ব্যবহার করা হচ্ছে সেখানে। কায়িক পরিশ্রমেও অনীহা লক্ষ্য করা যায়। আর এসবই উচ্চ
রক্তচাপকে প্রভাবিত করে।
কম
লবন, বেশি ফলমুল ও তরিতরকারি এবং হাঁটাচলা এই কয়েকটি দিকে লক্ষ্য রাখলেই উচ্চ রক্তচাপকে আয়ত্বে আনা যায়।
রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেনে চলুন ১০ নিয়ম:
ওজন:
অতিরিক্ত
ওজনের কারণে একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই ওজন কমালে অনেক শারীরিক সমস্যার হাত
থেকেই রেহাই মিলতে পারে। উচ্চ রক্তচাপও তার ব্যতিক্রম নয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে
তাই ওজন কমান। বিশেষ করে ঝরিয়ে ফেলুন ভঁড়ি।
ব্যায়াম:
নিয়মিত
ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সপ্তাহে তিন দিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম
করলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দূরে রাখতে পারবেন।
ডায়েট:
সঠিক
ডায়েট মেনে চললেই অর্ধের শারীরিক সমস্যার সমাধান করা যায়। পটাশিয়াম যুক্ত স্বাস্থকর
খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
সোডিয়াম:
খাবারে
নুন বা সোডিয়ামের পরিমাণ সামান্য কমালেও তা রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই রক্তচাপ
বাড়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এখনই অতিরিক্ত নুন খাওয়ায় রাশ টানুন। এতে শরীর অনেক সুস্থ
থাকবে।
অ্যালকোহল:
অ্যালকোহল:
পরিমিত
পরিমাণ অ্যালকোহল যেমন রক্তচাপ কমিয়ে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, তেমনই অতিরিক্ত
পরিমাণ অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই যদি আপনার মদ্যপানের অভ্যাস থাকে তা হলে
তার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ধূমপাণ:
প্রতিটি
সিগারেট শেষ করার পর বেশ কিছুক্ষন আমাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে
ধূমপান ত্যাগ করেতে পারেন।
ক্যাফেইন:
ক্যাফেইন
রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। কফি খাওয়ার পর রক্তচাপ মাপলে দেখতে পাবেন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি
আসবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাফেইনের মাত্রা কমান।
স্ট্রেস:
উচ্চ
রক্তচাপের অন্যতম কারণ ক্রনিক স্ট্রেস। যদি পারিবারিক, পেশাগত বা আর্থিক স্ট্রেস মাথায়
চেপে বসে তাহলে অবশ্যই সতর্ক থাকুন। চেষ্টা করুন স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখার।
নিয়মিত চেক আপ:
যদি
আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে তা হলে বাড়িতেই রক্তচাপ মাপার যন্ত্র কিনে রাখুন।
নিয়মিত মনিটর করুন রক্তচাপ। যদি সমস্যা না থাকে তাহলে প্রতি ৬ মাস থেকে এক বছর অন্তর
চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিন।
পরিবার:
সুস্থ থাকার জন্য পারিবারিক সম্পর্কগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সুস্থ পারিবারিক সম্পর্ক আমাদের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রেস দূরে রাখে।
ফলে চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনও অনেক কমে যায়।
কোন মন্তব্য নেই