ব্রেকিং নিউজ

বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস (গ্রামীণ নারী কৃষিতে প্রত্যক্ষ শক্তি)

বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস:
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। আর এই কৃষির সাথে নারী ব্যপকভাবে সংশ্লিষ্ট। নারী ফসল সংরক্ষণ করে, ধান মাড়াই-ঝাড়াই করে, এমনকি প্রয়োজনে জমিতে বীজ বপণ করে। কৃষির সাথে জড়িত গরু-মহিষের যত্ন নেয়।ধান উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২৩টি ধাপ রয়েছে। এই ২৩টি ধাপের মধ্যে ১৭টির সঙ্গে নারী সরাসরি যুক্ত। অন্য ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও চিত্রটা প্রায় একই রকম। কিন্তু কোথাও নারীর এই অবদানের কথা স্বীকার করা হয়না।

সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ও সিডও সনদের মতো আন্তর্জাতিক সনদগুলোতে নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিশ্চিত করার কথা থাকলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তা বাস্তবায়নে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। জাতিসংঘের ৪র্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন ১৯৯৫ সালের ১৫ অক্টোবর প্রথম গ্রামীণ নারী দিবস পালনের জন্য প্রস্তাব করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য ১৯৯৭ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড উইমেন সামিট ফাউন্ডেশন সবাইকে উদ্ধুদ্ধ করা শুরু করে। এরপর থেকে ১০০টি দেশে দিবসটি নিয়মিত পালিত হয়ে আসছে। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালনের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। তারপর থেকে জাতীয় উদ্যোগ ছাড়াও অনেক সংগঠনই নিজেদের উদ্যোগে দিবসটি পালন করে আসছে।

বাংলাদেশে দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, গ্রামীণ নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক মূ্ল্যবোধ ও মার্যাদাকে সুসংহত করা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গ্রামীণ নারীর বাস্তবতা তুলে ধরে তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা।

আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশের নারী বিশেষ করে গ্রামীণ নারীরা গৃহস্থালি কাজকর্মে ও কৃষিশ্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদনের সাথে গ্রামীণ নারীর সম্পর্ক প্রত্যক্ষ্যভাবে জড়িত।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একজন গ্রামীণ নারী প্রতিদিন ১৬-১৮ ঘন্টা এসব কাজে নিয়োজিত থাকে।কিন্তু এরপরও তারা ক্ষমতায়িত নয়। তাদের এই দীর্ষশ্রম স্বীকৃত নয়, যেহেতু দীর্ঘশ্রমের বিনিময় দৃশ্যত তাঁরা কোন অর্থ উপার্জন করেনা। এইসব কাজের বিনিময়ে যেহেতু শ্রমশক্তি জরিপে অন্তর্ভূক্ত হয়টি সেহেতু তার শ্রমহীনভাবে চিহ্নিত হয়েছে।

২০০৮ সালে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কৃষিখাতে নিয়োজিত পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান শতকরা ৬০ থেকে ৬৫ শতাং বেশি তবুও কৃষিকাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের তেমন কোন মূল্যায়ন নেই বললেই চলে।

গ্রামীন জীবযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল)-এর ২০১২ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫-০৬ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশের এক কোটি বিশ লাখ নারীশ্রমিকের ৭৭ শতাংশই গ্রামীণ নারী। যারা মূলত কৃষি, পশুপালন, হাঁস-মুরগি পালন, মাছচাষ প্রভৃতি কাজে নিয়োজিত।১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০০৯-১০ সময়ে কৃষি, বন ও মৎসখাতে অংশগ্রহণকারী নারীর সংখ্যা ৩৭ লাখ থেকে বেড়ে ৮০ লাখ হয়েছে। এ বৃদ্ধির হার ১১৬ শাতাংশ যদিও শ্রমবাজারে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ থাকলেও নিয়োজিত নারীশ্রমিকের ৭২ শতাংশই অবৈতনিক পারিবারিক নারীশ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত। অথচ এই সময়ে এই খাতে পুরুষশ্রমিকের সংখ্যা কমেছে ২.৩ শতাংশ।২০০২-০৩ সময়ের তুলনায় বর্তমানে কৃষি, বন ও মৎসখাতে পুরুষশ্রমিকের অংশগ্রহণ কমেছে ১০.৪ শতাংশ।


কৃষিতে নারীরা কীভাবে ও কতোভাবে যুক্ত:

ফসল উৎপাদন
বীজতলা তৈরি, বীজ লাগানো, সেচ দেওয়া, চারাগাছ উঠানো, আগছা পরিষ্কার, সার দেওয়া, জমি নড়ানো, ফসল কাটা, ফসল উঠানো, ফসল বহন করা, ফসল মাড়াই, ফসল শুকানো, ধান সিদ্ধ করা, চাল তৈরি, বীজ সংরক্ষণ, বাড়ির আশেপাশে সবজি চাষ, জমিতে ফসল বাছাই করা (মরিচ, কচু, আলু) ইত্যাদি।

পশুপালন
হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করা, গবাদিপশুকে খাওয়ানো, খোয়ার পরিষ্কার, রাতের বেলায় নিরাপদে রাখা, সুস্থতা নিশ্চিত করা, গবাদিপশুর গোবর সংগ্রহ এবং তা জ্বালানি ও কৃষিকাজে ব্যবহার।

মৎস্য চাষ
মাছ ধরা, বিক্রি ও মাছ শুকানো, পোনা ধরা ও বিক্রি, চিংড়ি ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করা, জাল বোনা, মাছ ধরা।

বন তৈরি ও বনজসম্পদ সংরক্ষণ
নার্সারী, বৃক্ষ ও বনজসম্পদ সংশ্লিষ্ট কাজ, বনজসম্পদ ব্যবহার করে নানা হস্তশিল্পের কাজ, পরিবারের জ্বালানির জোগান-বন থেকে পাতা, ডালপালা সংগ্রহ, পশুর মল (গোবর) সংগ্রহণ।

পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদানকেও তুলে ধরবে নারীর কাজের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক হল-
  •  ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের একজন নারী সমবয়সি একজন পুরুষের তুলনায় প্রায় তিন গুন সময় এমন কাজে নিয়োজিত থাকে যা জিডিপিতে ধরা হয়নি
  • একজন নারী মজুরিবিহীন কাজে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ঘন্টা এবং একই কাজে একজন পুরুষ প্রতিদিন . ঘন্টা সময় ব্যয় করে
  •  একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২.১টি মজুরিবিহীন কাজ করে, যা জিডিপিতে যোগ করা হয় না। পুরুষের ক্ষেত্রে ধরণের কাজের সংখ্যা .৭টি
  • প্রতিস্থাপন পদ্ধতি (কাজের ছায়ামূল্য ব্যবহার করে) অনুযায়ী, জাতীয় আয়ের হিসেবে (জিডিপি) অন্তর্র্ভক্ত করা হয় না এমন কাজ, যেগুলো নারী করছে, তার আনুমানিক বার্ষিক মূল্য (২০১৩-১৪ অর্থবছ) জিডিপি প্রায় ৭৬. শতাংশের সমপরিমাণ

এক নজরে নারীর কাজসমূহ যা মূল্যায়ন করা হয় না
  • জিডিপিতে গৃহশ্রমভিত্তিক শ্রমিকদের বার্ষিক অবদান প্রায় ১৫০ বিলিয়ন টাকা (.৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারি পরিসংখ্যানে এই অবদান প্রতিফলিত হয় নাই
  • বাংলাদেশে গড় নারীরা তাদের বিনামূল্য শ্রমের মাধ্যমে বার্ষিক ৪৭৬৫ টাকা (১৩৩.১৪১ ডলার) করে অর্থনীতিতে অবদান রাখে
  • পরিসংখ্যানের বাইরে থাকা এই কাজের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ অবদান নারীর আর শতকরা ভাগ অবদান পুরুষের
  •   শহরের বা গ্রামের একজন নারী ঘরে বাইরে মিলিয়ে দৈনিক গড়ে ১৬ থেকে ২০ ঘন্টা প্রায় ৪৫ ধরণের কাজ করে
  •  গ্রামের নারীরা ৫৩ শতাংশ সময় ব্যয় করে কৃষি শিল্পের মতো অর্থনৈতিক কাজে। অথচ সেখানে পুরুষ ব্যয় করে ৪৭ শতাংশ
  • সংসারে নারীকে পুরুষের চাইতে ১৫ গুন বেশি কাজের বোঝা বহন করতে হয়ে
  • যদি আমরা নারীর অবমূল্যায়িত কাজের অংশ জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ করতে পারি, তাহলে জাতীয় উৎপাদনে নারীর অবদান ২৫ শাতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশ হয়ে যাবে

কোন মন্তব্য নেই

রুয়ান্ডার গণহত্যা

মুরাম্বি কারিগরী বিদ্যালয়ে সংঘটিত গণহত্যার শিকারদের খুলি “আর কখনোই নয়“ এই প্রত্যয় নিয়ে প্রতিবছরের ৭ এপ্রিল রুয়ান্ডা তার রাষ্ট্রে ঘটে...